বর্তমান করোনাভাইরাসের পরবর্তী সময়ের অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে ঠিকমতো ঘুম না আসা। জীবনে কোনো না কোনো সময়ে সকলেই অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়। অনেকই অনিদ্রার সমস্যা কাটিয়ে উঠলেও বেশিরভাগই পারেন না। অনিদ্রা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন-কারো ক্ষেত্রে রাত ১০টায় ঘুমোতে যায় কিন্তু রাত ১১টার আগে তার ঘুম আসে না অর্থাৎ ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লেও ঘুম ভেঙ্গে যায়, অর্থাৎ একটানা ঘুমাতে পারেন না। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন ও একটানা ৫-৬ ঘন্টা ঘুমাতে পারেন কিন্তু এত ঘুমিয়েও তার তৃপ্তি হয় না। তিনি মনে করেন, তার ঘুম খুবই হালকা ও অপর্যাপ্ত। এজন্য তিনি একটা সতেজ ও গভীর ঘুম চান।

চিকিৎসাঃ আমাদের দেশে অনিদ্রার দুই ধরণের চিকিৎসা আছে। মেডিসিন সাপোর্ট থেরাপিতে অনিদ্রা দূর করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের কতগুলো ঔষধ প্রদান করা হয় এবং এই মেডিসিন খেয়ে অনেকেই ভালো ফল পেয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ঘুমের ঔষধ খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর সাইকোলজিক্যাল থেরাপিতে একজন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী কতগুলো মনোবৈজ্ঞানিক নীতি ও কৌশল ব্যবহার করে অনিদ্রার চিকিৎসা করে থাকেন।

অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তির সাইকোলজিক্যাল এসেসমেন্ট এর পর একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট সাধারণত চার ধরনের চিকিৎসা কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন। এই কৌশলগুলো হলো:-

ক) স্লিপ হাইজিনঃ স্লিপ হাইজিন এর মাধ্যমে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়া ও জীবন যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে ভালো ঘুম তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য স্লিপ হাইজিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ধারার প্রধান বিষয়গুলো হলো, ক্যাফেইন নিকোটিন অ্যালকোহল খাদ্য ও ব্যায়াম। আবার শোবার ঘরের গোলমাল বা শব্দের মাত্রা, ঘরের তাপমাত্রা, ঘরে বায়ু চলাচলের ধরন, আলোর মাত্রা, এবং তোশক ও বালিশের আরাম প্রভৃতি আমাদের ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে।

খ) স্লিপ শিডিউলিংঃ এই পদ্ধতিতে কতক্ষণ বিছানায় থাকবেন তা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, যখন নিদ্রাভাব আসবে তখনই ঘুমাতে যাওয়া, ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসলে অন্য রুমে গিয়ে নামাজ পড়া বা পবিত্র কোরআন মজিদ তেলোয়াত করা বা প্রিয় বই পড়া বা রিলাক্সেশন প্রাকটিস করা, বিছানা ও ঘুমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং দিনের বেলা ঘুমের তন্দ্রা বাদ দেওয়া এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত।

গ) কগনিটিভ থেরাপিঃ কগনিটিভ থেরাপির মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তা, প্রত্যাশা, মূল্যায়ন, বিশ্বাষ ইত্যাদিতে পরিবর্তন নিয়ে আসার মাধ্যমে ব্যক্তির ঘুম বাড়ানো। বিভিন্নধরনের মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন ও মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করে ব্যক্তির ঘুমে পরিবর্তন আনা হয়।

ঘ) মাইন্ডফুলনেন্স থেরাপি বা রিলাক্সেশনঃ অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিকর অনুভুতির কারনে শরীর উত্তেজিত থাকে, যা ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মাইন্ডফুলনেন্স মেডিটেশন প্রাকটিস বা রিলাক্সশন শরীরে প্রশান্তি এনে দেয়। ইউটিউব দেখে এটা প্রাকটিস করতে পারেন।

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো নিজে নিজে প্রাকটিস করেও পর্যাপ্ত ঘুম না আসলে আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

লিখাঃ জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here