১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ফাঁসি দেওয়া হয় ২১ বছর বয়সী ইলমুদ্দিনকে। ইলমুদ্দিন ছিলেন অবিভক্ত ভারতের একজন মুসলিম। তার পিতা একজন ছুতার মিস্ত্রী ছিলেন। ইলমুদ্দিন ‘রঙ্গিলা রসূল’ নামক বইয়ের প্রকাশক রাজপালকে হত্যা করেন। এই বইয়ে রাসূল (সাঃ) নিয়ে কুৎসা রটনা করা হয়েছিলো। মুসলিমরা এটিকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেন। ভারতীয় মুসলিমরা বইটি নিষিদ্ধের দাবি জানায়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার মুসলিমদের দাবির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেনি। ইলমুদ্দিন রাজপালকে হত্যার সংকল্প করে বাজার থেকে এক রুপি দিয়ে একটি ছুরি কিনেন। ছুরিটি প্যান্টের ভেতর নিয়ে তিনি রাজপালের দোকানে গিয়ে তাকে হত্যা করেন।

পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ইলমুদ্দিনের আইনজীবী তাকে বলেছিলো যে, “তুমি বল যে তোমার মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। তুমি অবচেতন মনে হত্যা করেছো। তাহলে হয়তো তোমাকে ফাঁসি থেকে বাঁচানো যাবে”। ইলমুদ্দিন এভাবে বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, ” আমি আমার কাজের জন্য গর্বিত”। দন্ডবিধি অনুসারে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর তার ফাঁসি হয়। তার মৃতদেহ জানাজা ছাড়াই কারাগারে দাফন করা হয়। কিন্তু ড. আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল, মিয়া আমিরুদ্দিন এবং আবদুল আজিজের মতো মুসলিম নেতাদের হস্তক্ষেপে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। ইলমুদ্দিনের পিতা আল্লামা ইকবালকে জানাজায় ইমামতির জন্য অনুরোধ করেন। ইকবাল উত্তর দেন এই বলে, “এই মহান যোদ্ধার জানাজা পড়ানোর তুলনায় আমি একজন পাপী ব্যক্তি”। তিনি লাহোরের হিযবুল আহনাফের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ দিদার আলি শাহকে জানাজা পড়ানোর প্রস্তাব করেন।ইলমুদ্দিনের জানাজায় প্রায় ২ লাখেরও বেশী মানুষ উপস্থিত হয়েছিলো।

ছবিঃ টুইটার ইলমুদ্দিনের জানাজার ছবি যেখানে আল্লামা ইকবাল উপস্থিত আছেন।

মাওলানা জাফর আলী খান লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “হায়! আমি যদি তার মতো উচ্চ মর্যাদা অর্জন করতে পারতাম!” আল্লামা ইকবাল ইলমুদ্দিনের লাশ কবরে রাখতে রাখতে বলেন, ”এই নিরক্ষর যুবক ছেলেটি আমাদের শিক্ষিতদের চেয়েও এগিয়ে গিয়েছে।” তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মিয়ানওয়ালি কারাগারে গাজি ইলমুদ্দিন শহীদ মসজিদ নামে একটি মসজিদ তৈরী করা হয়।

কার্টেসি: খালিদ সাইফুল্লাহ