
এই লোকটি ছিল মক্কার গভর্নর। নাম শরিফ হুসাইন। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই ব্রিটিশদের শাসন ভারত উপমহাদেশে দীর্ঘায়িত হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত হয়। আন্দোলনের পরিকল্পকারীরা ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হন, লাখ লাখ স্বাধীনতাকামীকে জেলে বন্দি করা হয় আর মাল্টা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই উসমানি খিলাফাত টোটাল মধ্যপ্রাচ্য থেকে উচ্ছেদ হয়। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই লাখ লাখ মুসলিম নারী, শিশুর রক্তে পৃথিবী লাল হয়। তার গাদ্দারির কারণেই হিজাজভূমি, বায়তুল মাকদিসসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ওই সময়কার পরাশক্তিগুলো ভাগভাটোয়ারা করে নেয়। যার খেসারত মুসলিম জাতি এখনও দিয়ে যাচ্ছে। আর কতদিন এই খেসারত দিতে হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
ইংরেজরা তাদের এই দালালকে হিজাজের শাসনকর্তা হওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিল; যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। হিজাজ-ভূমিতে আলে সাউদের প্রতিপত্তি অর্জিত হলে ইংরেজদের কুনজরে পড়ে তাকে লাঞ্ছিত হয়ে এ অঞ্চল পরিত্যাগ করতে হয়। অতঃপর সে সিরিয়াতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অতঃপর ইংরেজরা তাকে দ্বিতীয় একটি দায়িত্ব দিয়েছিল যা আজ পর্যন্ত তার বংশধররা যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। এই হতভাগা ব্যক্তিটি ইংরেজদের প্রতারণা প্রত্যক্ষ করা সত্ত্বেও ইংরেজদের কাঠপুত্তলি হয়ে কাজ করে যেতে সম্মত হয়েছিল এবং তার বংশধররা আজ পর্যন্ত তা করে যাচ্ছে। এবার তাকে ফিলিস্তিনের পূর্ব দিকে অবস্থিত জর্দানের দায়িত্ব গ্রহণ ও সেখানে জায়নবাদীদের স্বার্থ বাস্তবায়নে কাজ করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অতঃপর এ অঞ্চল থেকে মুসলমানদের কোনো ধরনের সহযোগিতা ও যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সে ও তার বংশধররা ফিলিস্তিনের পাশে থেকে ইয়াহুদিদের স্বার্থে সকল ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে।
তারা মুসলমান হয়েও ফিলিস্তিনের চতুপার্শ্বে এমন দুর্গ নির্মাণ করে রেখেছে, যেখানে অসহায় মুসলমানদের কোনো ধরণের সহযোগিতার বিপরীতে অত্যাচারী হিংস্র ইয়াহুদিদের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর এক ছেলে ইরাক ও সিরিয়া অন্য ছেলে জর্দানের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এদের হাত থেকে ইরাক ও সিরিয়া নিষ্কৃতি পেলেও আজ পর্যন্ত জর্দান এদের অলক্ষুণে হাতে আবদ্ধ রয়েছে।
তার ছেলে আবদুল্লাহ বিন হাসান ৩০ বছর (১৯২০-১৯৫০) যাবৎ জর্দানের শাসনকর্তা ছিল। তার শাসনামলেই ইসরাইল প্রতিষ্ঠা লাভ করে, ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়; কিন্তু এতে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। অতঃপর শরিফ হুসাইনের পৌত্র তলাল বিন আবদুল্লাহ জর্দানের শাসনভার গ্রহণ করে আর তার শাসনকালে একবছর (১৯৫১-১৯৫২) স্থায়ী হয় এবং মস্তিষ্কজনিত অসুস্থতায় পদত্যাগ করতে হয়। অতঃপর তার প্রপৌত্র হুসাইন বিন তালাল শাসনকার্য পরিচালনা করে; যাকে পৃথিবীবাসী বাদশাহ হুসাইন নামে চিনে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর্যন্ত সে জর্ডানকে ইসরাইলের স্বার্থ সংরক্ষণের কেন্দ্রভ‚মি বানিয়ে রাখে। তার শাসনামলে ১৯৬৮ ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইল জর্দানের পশ্চিম তীর দখল করে ইয়াহুদা ও সামেরা নামের দুটি বসতিতে বণ্টন করে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই শাসকের কণ্ঠ থেকে অসুস্থ হাঁসের ফ্যাসফ্যাসে শব্দের প্রতিবাদ ব্যতীত ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তার শাসনামলেই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মাধ্যমে বায়তুল মাকদিস ইয়াহুদিদের হাতে সমর্পণ করা হয় এবং বায়তুল মাকদিস দখল ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার পরিবর্তে শুধু ইসরাইলকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়াই নয়; বরং ইসরাইলের স্বার্থ সংরক্ষণে নিজের দেশে আমেরিকান সৈন্য স্থাপনাও নির্মাণ করে। ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাথে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুমান সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইসহাক রবিনের মৃত্যুর পর তার কবরে গিয়ে কান্নাকাটি থেকেই অনুমান করা যায়। অথচ ইয়াহুদি ধর্মমতে ইয়াহুদিদের কবরে মুসলমানদের যাওয়ার অনুমতি নেই। অন্যদিকে যখন সে অসুস্থ হয়ে ছিল, ইয়াহুদিদের উপাসনালয়গুলোতে তার জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করানো হয়েছিল।
সে এতটাই হতভাগা ছিল যে, ইয়াহুদিদের জন্য স্বজাতির ওপর অত্যাচার করতেও দ্বিধাবোধ করতো না। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ইয়াহুদিদের অত্যাচারে হিজরত করে আসা ৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে তার আদেশেই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফিলিস্তিনিরা সেই মাসকে কালো সেপ্টেম্বর হিসেবে স্মরণ করে। জর্দানে অবস্থিত ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে চলমান হামলা ও প্রতিবাদ সে চরমভাবে দমন করেছিল। তার মৃত্যুর পর বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পাঁচ জন ইহুদী এবং বিভিন্ন খ্রিষ্টান শাসকরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার জানাজায় শরীক হয়ে তাকে অশুভ যাত্রায় রওনা করিয়ে দেয়।
ফিলিস্তিনের মুসলমানরা তাকে ঘৃণাভরে স্মরণ করলেও ইসরাইল তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করেছে যা জাতির বেইমানদের জাহান্নামের দিকে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে তার ছেলে আবদুল্লাহ জর্দানের শাসনকার্য পরিচালনা করছে। তার মা ছিল ব্রিটিশ খ্রিষ্টান। বাদশাহ হুসাইনের দুইজন স্ত্রী ছিল। তন্মধ্যে একজন আমেরিকান ইয়াহুদি আরেকজন ব্রিটিশ খ্রিষ্টান। আর এর মাধ্যমেই তার ইয়াহুদি-নাসারাদের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের অনুমান করা যায়। বাদশাহ আবদুল্লাহকেও বিশেষভাবে অনৈসলামিক পন্থায় প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। আর সেভাবেই সে তার পিতার অনুকরণে ফিলিস্তিনিদের সাথে এমন আচরণ করে যাচ্ছে, যেন তাদের ক্ষতস্থানগুলো টাটকা থাকে এবং তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পায়।
অপেক্ষায় থাকুন, কখন ভাগ্যনিয়ন্ত্রক এই বংশকে তাদের নির্দিষ্ট পরিণামে পৌঁছিয়ে দেয়।
চিনতে পারছেন ওই গাদ্দারকে? যে ইসলামের ইতিহাসে সবথেকে বড় বিশ্বাসঘাতক ছিল।
লিখা সংগ্রহ : “ইসলামের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস” গ্রুপ থেকে